
প্রকাশিত: Fri, Dec 8, 2023 10:02 PM আপডেট: Mon, Jun 23, 2025 8:20 PM
নতুন কারিকুলাম নিয়ে কিছু কথা
সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা : বাংলাদেশে আগামী বছর প্রাথমিক এবং মাধ্যমিক স্তরে কয়েকটি শ্রেণিতে নতুন একটি কারিকুলাম বা শিক্ষাক্রম চালু করতে যাচ্ছে সরকার। এতে শিক্ষার্থীদের পাঠ্যসূচি এবং মূল্যায়ন পদ্ধতিতে ব্যাপক পরিবর্তন আসছে। আর এগুলো নিয়ে বিভিন্ন মহলে নানা কথাবার্তা চলছে। নতুন শিক্ষাক্রমে দশম শেণির আগের সব পাবলিক পরিক্ষা তুলে দেওয়া হয়েছে। এসএসসি এবং এইচএসসি পরিক্ষা পদ্ধতিতেও পরিবর্তন আনা হয়েছে। এছাড়া থাকছে না নবম শ্রেণিতে বিভাগ পরিবর্তনের সুযোগ। ফলে একাদশ শ্রেণিতে গিয়ে যেকোনো শিক্ষার্থী যেকোনো বিভাগে পছন্দমতো পড়তে পারবে। এই কারিকুলামের একটি গঠনমূলক সমালোচনা হতেই পারে। কিন্তু আমরা দেখছি একদল লেগে পড়েছে এটা বলতে যে, এটা ধর্ম কেড়ে নেবে। আরেক গুজববাজ দল বলছে, যেহেতু এটি কর্মমুখী শিক্ষাকে গুরুত্ব দিচ্ছে, তাই শিক্ষার্থীরা ভবিষ্যতে চাকর-বাকর হয়ে যাবে। অথচ এরা বিদেশে থাকে, বিদেশে যায় এবং এরাই নানা সময় বলে কাজের ক্ষেত্রে ছোটবড় বা মর্যাদার জায়গাটা কখনো এভাবে দেখা যায় না। ক্লাসে শিক্ষক-শিক্ষিকারা গান গাইলে, গল্প করে, মজা করে ক্লাস নিলে একদল বলছে, ধর্ম চলে যাবে আরেক দল দলছে এটা নাকি আমাদের সংস্কৃতি নয়। জাপান, ইউরোপ, উত্তর আমেরিকার স্কুলের ছেলেমেয়েরা ক্লাসরুম পরিষ্কার করে, মাঠে-ঘাটে কাজ করে ওদের কিছু হয় না। হয় আমাদের। এই কারিকুলামের মূল কথা শিখন হবে অভিজ্ঞতায়, মূল্যায়ন হবে যোগ্যতায়। শিক্ষার্থী শিখবে পরিবার থেকে, বিদ্যালয় থেকে, সহপাঠি থেকে এমনকি কমিউনিটি থেকে। তাদের মূল্যায়ন শুধু শিক্ষকরাই করবে না তার সহপাঠি, অভিভাবক, কমিউনিটি করবে। স্ব-শিক্ষায় শিক্ষিত হবে শিক্ষার্থীরা, শিক্ষক শুধু মেন্টরের ভূমিকায় থাকবে।
আমাদের চিরাচরিত দৃশ্য হলো ক্লাসরুমে দাঁড়িয়ে শিক্ষক চিৎকার করছেন, বকাবকি করছেন আর সবার একটাই কথা পড়ালেখা মানে ভালো নম্বর, গ্রেড আর সার্টিফিকেট। শুধু নম্বরের পেছনে দৌঁড়ানো। নম্বরের জন্য মুখস্থ করো, অন্যদের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করো, কাউকে নোট দেখাবে না। এমন একটি স্বার্থপর ব্যবস্থা আমরা বড় করে তুলছি প্রজন্মের পর প্রজন্ম। অভিভাবকরাও বলেন, কাউকে নোট দেখাবে না। আমাদের মুখস্থবিদ্যা ভালো নম্বর দেয়। কিন্তু কোনো কাজে আসে না। কোনো একটা বিষয় কেন পড়ছি, তার উদ্দেশ্য কী কখনো জানা হয় না। আমরা বুঝতেও চিষ্টা করিনি। তাই তো ১২ বছর ইংরেজি পড়েও আমরা ইংরেজি ভালোভাবে বলতে পারি না। কিন্তু ৩ মাস লেঙ্গুয়েজ কোর্স করে ঠিকই বলতে পারি। কারণ সেখানে বাস্তবিক শিক্ষা বেশি দেয়। এই যুগে এসেও যখন লেখা হয় টাকা চেয়ে পিতার কাছে পত্র লিখো, তখন কি সেই শিক্ষা শিক্ষার্থীদের কানেক্ট করে? সে কারণেই এই কারিকুলামে সেটা থাকছে না। ফিজিক্সে অনার্স, মাস্টার্স করেছে শিক্ষার্থী। কিন্তু পরিবারে ইলেকট্রিক বা ইলেকট্রনিকের কাজ করার জন্য ঠিকই মিস্ত্রী ডাকতে হয়। সেই মিস্ত্রীর কিন্তু কোনো সার্টিফিকেট নেই। তাকে কি আমরা অশিক্ষিত বলবো? শিক্ষার সংজ্ঞা কিন্তু তা বলে না। সবাই বলছেন, এই কারিকুলাম নাকি বাচ্চাদের ডিভাইসমুখী করে দেবে। প্রশ্ন : এমনিতে কি সেটা বাকি আছে? স্মার্টফোন একটি শিক্ষার্থীর জীবনকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে, এটি আমরা জানি। কিন্তু একে তো জীবন থেকে ডিলিট করা যাবে না। এই কারিকুলামে এর যৌক্তিক ব্যবহারের কথা বলা হয়েছে। নতুন কারিকুলামে ডিজিটাল প্রযুক্তি বিষয়ে, প্রযুক্তির নৈতিক এবং সচেতন ব্যবহারটাই শেখাবে।
গ্রুপ ওয়ার্ক বা দলীয় কাজের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা শিখছে, সহযোগিতা, সহমর্মিতা, উদারতা এবং নেতৃত্বদানের ক্ষমতা। অথচ এটারও বিরোধিতা করছেন কেউ কেউ। সিলেবাসভিত্তিক শিক্ষায় কোচিং নির্ভরতা বাড়ে এবং বুঝতে পারা যায় এই কোচিংসেন্টার ওয়ালারা বেশি গুজব ছড়াচ্ছে। নতুন সব কিছুই বাস্তবায়নে সময় লাগে। আশা করি এটিও সমস্যা অতিক্রম করবে। এই কারিকুলামের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ আর্থিকভাবে শিক্ষকরা কতটা সক্ষম যে তারা ভালো শিক্ষা দেবেন। নিশ্চই এ বিষয়ে সরকার ভালো ব্যবস্থা নিবে। অধিক শিক্ষার্থী এবং স্বল্প অবকাঠামোও একটি চ্যালেঞ্জ। কিন্তু অবকাঠামো নেই বলে কারিকুলাম বদলাবে না, এটা নিশ্চই কোনো কথা হতে পারে না। শিক্ষকদের প্রশিক্ষণকে কেন খারাপ দৃষ্টিতে দেখা হচ্ছে তাও আবার মিথ্যা ভিডিও ছেড়ে? একজন শিক্ষার্থী যদি রান্না করা শেখে সেটা কি খারাপ? সবদেশে কাজ করতে গিয়ে, লেখাপড়া করতে গিয়ে তো শিখতেই হচ্ছে। গরু, ছাগল, কুকুর, বিড়াল না দেখেই আমাদের এগুলো মুখস্থ রচনা শেখানো হয়েছে। এখন দেখানোর চেষ্টা কেন খারাপ হলো সেটাই বুঝতে পারছি না। শিক্ষার্থীদের শ্রমের কাছে নিয়ে যাওয়া তো অপরাধ নয়। বরং শিক্ষার্থীরা অন্যকে শ্রদ্ধা করা শিখছে। পরিচিতি : সিনিয়র সাংবাদিক। সূত্র : ‘সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা’ ফেসবুক পেজের ভিডিও কন্টেন্ট থেকে শ্রতিলিখন করেছেন জান্নাতুল ফেরদৌস
আরও সংবাদ
চ্যাম্পিয়ন ভারত : একটা ছোট মুহূর্ত কতো বড় পার্থক্য গড়ে দিতে পারে
‘ওই ক্যাচ হয়নি, সুরিয়াকুমারকে আবার ক্যাচ ধরতে হবে’!
কতো দেশ, কতোবার কাপ জিতলো, আমাদের ঘরে আর কাপ এলো না!
সংগীতাচার্য বড়ে গোলাম আলি খান, পশ্চিমবঙ্গের গর্ব সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় ও আমি
ইন্ডিয়ান বুদ্ধিজীবী, ফ্যাসিস্ট রাষ্ট্র ও দেশের বুদ্ধিজীবী-অ্যাক্টিভিস্ট
মতিউর প্রতিদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ৮৩ ব্যাচের বন্ধুদের গ্রুপে সৎ জীবন যাপনের উপদেশ দিতেন!

চ্যাম্পিয়ন ভারত : একটা ছোট মুহূর্ত কতো বড় পার্থক্য গড়ে দিতে পারে

‘ওই ক্যাচ হয়নি, সুরিয়াকুমারকে আবার ক্যাচ ধরতে হবে’!

কতো দেশ, কতোবার কাপ জিতলো, আমাদের ঘরে আর কাপ এলো না!

সংগীতাচার্য বড়ে গোলাম আলি খান, পশ্চিমবঙ্গের গর্ব সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় ও আমি

ইন্ডিয়ান বুদ্ধিজীবী, ফ্যাসিস্ট রাষ্ট্র ও দেশের বুদ্ধিজীবী-অ্যাক্টিভিস্ট
